রাস্তা থেকে বাড়িতে (ভাগ্য দোষে কিইনা হতে পারে)

পুরনো একটি বাড়ির ছাদের নিচে নতুন পরিবারের সঙ্গে নয়া  যাত্রা শুরু হলো ৬৫ বছর বয়সী সাবেক লাখপতি সম্পাদক সুনীতা নায়েকের।
মুম্বাইয়ের ভারসোভা এলাকার জেপি রোডের ফুটপাথে এখন আর তাকে ঘুমাতে হবে না। দুই মাসের মধ্যে লাখ লাখ রুপি, গাড়ি আর অ্যাপার্টমেন্ট হারানো মারাঠি ম্যাগাজিনের সাবেক সম্পাদক সুনীতার ঠিকানা ছিল এই ফুটপাথ।
কিন্তু রবিবার ‘মিডডে’তে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে এর পাঠক জর্জ মিসকিটা ও তার স্ত্রী ক্রিস্টাইনি সুনীতাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
৪৯ বছর বয়সী জর্জ সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিডডে এর প্রতিবেদন আমাকে আবেগতাড়িত করে এবং ওই মুহূতেই আমি সুনীতা ও তার সঙ্গে থাকা কুকুরটিকে আমাদের পরিবারের অংশ হয়ে যাওয়ার অনুরোধ করতে সিদ্ধান্ত নেই। আমাদের বাড়িতেও ১০টি কুকুর আছে। এরপর সুনীতাকে সোমবার আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসি।’
আর মিসকুইটা বলেন, অতি শিগগিরই সুনীতার জন্য একটি ঘর সংস্কার করা হবে। যে ঘরে তার বাবা থাকতেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা একটি পুরনো বাড়িতে থাকি। এর অবস্থা খুব বেশি ভালো না। সুনীতাকে দুই কক্ষবিশিষ্ট এ বাড়িতে মানিয়ে নিতে হবে। তবে খুব তাড়াতাড়ি তার জন্য অন্য একটি কক্ষ ঠিক করব। এটি পলেস্তার ও রঙের ব্যবস্থা করা হবে। যাতে সুনীতা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারেন।’
উল্লেখ্য, পাঁচটি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারা ভাগ্যবিড়ম্বিত সুনীতা  মুম্বাইয়ের গুরুদুয়ারা সাচখন্দ দরবারের আনুকূল্যে ফুটপাতে প্যান্ডেল করে থাকতেন।  খুব কম বয়সে মা-বাবাকে হারান তিনি। তবে বন্ধু-বান্ধবের উৎসাহে তিনি পুনে ইউনিভার্সিটি থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। এর পর মারাঠি ম্যাগাজিন গৃহলক্ষ্মীর সম্পাদক হন সুনীতা। সবকিছু ভালোই চলছিল। চলাচলের জন্য দুটি গাড়ি ছিল তার। ছিল নিজস্ব ড্রাইভার। হঠাৎ সবিকছু এলোমেলো হয়ে যায়। কয়েক বছর আগে তার পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়।
আশির দশকের গোড়ার দিকে ওরলিতে সেঞ্চুরি বাজারের কাছে দুটি এপার্টমেন্ট কেনেন সুনীতা। ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি ওই অ্যাপার্টমেন্টে বসবাস করেন। এর আগে উত্তরাধিকার সূত্রে পুনেতে তিনি একটি বাংলোর মালিক হন। তার প্রতিবেশী অ্যাপার্টমেন্ট মালিকদের অনেকেই তাকে চেনেন।
তার নিজের জবানিতেই শোনা যাক সুনীতার ভাগ্য বিপর্যয়ের কাহিনী- ‘১৯৮৪ সালে আমি পুনের ভান্ডার রোডের বাংলোটি ৬ লাখ রুপিতে বেচে দেই। ওরলির দুটি ফ্ল্যাট এবং দুটি কার-একটি হুন্দাই এসেন্ট এবং একটি ইন্ডিকা সব মিলে ৮০ লাখ রুপিতে বেচে দেই। চলে যাই থেনের ভাড়া করা বাংলোতে।
কিন্ত শিগগিরই বুঝতে পারলাম আমার ব্যাংক ব্যালেন্স রহস্যজনক কারণে দ্রত ফুরিয়ে যাচ্ছে। অগত্যা ভারসোভায় এসে সস্তায় ভাড়া ফ্ল্যাট খুঁজতে থাকি। কিন্তু এরই মধ্যে আমি নি:স্ব হয়ে পড়ি এবং ফুটপাতে উঠতে বাধ্য হই। আমার ব্যাংকে জমা অর্থ কীভাবে বেহাত হলো তা বুঝে উঠতে পারছি না।’
হতে পারে তার কোনো কর্মচারী, যে তার ব্যাংক লেনদেনের কাজ করত, সেই হয়তো সর্বনাশ করেছে। সুনীতার মোবাইল সেট বৃষ্টিতে নষ্ট হওয়ায় তার কর্মচারী ও ঘনিষ্ঠজনদের ফোন নম্বরও সব মুছে গেছে। তিনি এখন শুধু স্মৃতিচারণাই করতে পারেন। কিন্তু কারো কাছে তিনি হাত পাতেন না।
অনেকে তাকে থাকার ব্যবস্থা করার কথা বলছেন। কিন্তু তাদের কথা হচ্ছে ওই কুকুর তাকে ছাড়তে হবে। কিন্তু সুনীতার কথা, যারা তার সঙ্গে বিশ্বস্ততার সঙ্গে ১২টা বছর কাটিয়ে দিল তাদের ছেড়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

সূত্র: এনডিটিভি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন