বাল্ট্রা দ্বীপ

প্রকৃতির বিচিত্র সৃষ্টি রূপে বেশ কিছু দ্বীপ অমীমাংসিত রহস্য হিসেবে আজ পর্যন্ত বিস্ময়ের সৃষ্টি করে রেখেছে। এর মধ্যে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য হল বাল্ট্রা। এটি ইকুয়েডরের গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের এ
কটি বিশেষ দ্বীপ। বাল্ট্রা মূলত মানববসতিশূন্য একটি দ্বীপ। দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরের নিকটবর্তী ১৩টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত ম্যালাপোগোস দ্বীপপুঞ্জ। আর এই ১৩টি দ্বীপের একটি হচ্ছে বাল্ট্রা।
কিন্তু এখানকার অন্য ১২টি দ্বীপ থেকেবাল্ট্রা একেবারেই আলাদা, অদ্ভুত এবংরহস্যময়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কৌশলগত কারণে এই দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি দ্বীপে বিমানঘাঁটি স্থাপন করে মার্কিন সরকার। এরপর থেকেই বিশ্ববাসী জানতে পারে বাল্ট্রা দ্বীপের এই অদ্ভুত রহস্যের কথা। এটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় দ্বীপপুঞ্জ হওয়ায় এখানে প্রচুর বৃষ্টি হয়। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো বৃষ্টির এক ফোঁটাও পড়ে না বাল্ট্রাতে। কী এক রহস্যজনক কারণে বাল্ট্রার অনেক ওপর দিয়ে গিয়ে অন্যপাশে পড়ে বৃষ্টি। বাল্ট্রার অর্ধেক পার হওয়ার পর অদ্ভুতভাবে আর এক ইঞ্চিও এগোয় না বৃষ্টির ফোঁটা। বৃষ্টি যত প্রবলই হোকএ যেন সেখানকার এক অমোঘ নিয়ম।বাল্ট্রা বাদে এখানকার প্রতিটিদ্বীপেই আছে সিল মাছ, ইগুয়ানা, দানবীয়কচ্ছপ, গিরগিটিসহ বিরল প্রজাতির কিছুপাখি।
কিন্তু বাল্ট্রার ব্যাপারটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ দ্বীপে কোনও উদ্ভিদ, প্রাণী বা কীটপতঙ্গ নেই।
বাল্ট্রা আর পাশের দ্বীপ সান্তাক্রজের মাঝে তিন ফুট গভীর ও কয়েক ফুট চওড়া একটি খাল আছে। দ্বিতীয়বিশ্বযুদ্ধের সময় এ গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি পরের দ্বীপে এয়ারবেস স্থাপন করে ইউএস সরকার। ফ্রেন্সিস ওয়ানার ছিলেন এখানকারই একজন দায়িত্বরত অফিসার। এ দ্বীপপুঞ্জে থাকাকালীন অদ্ভুত সব ঘটনা আর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন তিনি।যেগুলো পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলে রীতিমতো বিস্ময়ের ঝড় ওঠে। তিনি লিখেছেন, ‘জীবনের সবচেয়ে বড় বড় বিস্ময়কর ঘটনাগুলোর মুখোমুখি হয়েছি আমি বাল্ট্রা দ্বীপে গিয়ে।
একটা নয় দুটো নয়, একের পর এক অসংখ্য অবিশ্বাস্য সব ব্যাপার ঘটেছে আমার চোখের সামনে। বিস্ময়ে হতবাক আমি শুধুদৃষ্টি মেলে দেখেই গেছি এসব, কোনও যুক্তিযুক্ত উত্তর বা ব্যাখ্যা খুঁজে পাইনি। সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের একটি শক্তি কাজ করছে দ্বীপটির ভেতর। যার প্রভাবে ঘটেছে একের পর এক এসব রহস্যময় ও অবিশ্বাস্য ঘটনা। বাল্ট্রাতে এলেই অস্বাভাবিক আচরণ করে নাবিক বা অভিযাত্রীর কম্পাস। সবসময় উত্তর দিক-নির্দেশকারী কম্পাসএখানে কোনো সময় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আবার দিক-নির্দেশক কাঁটা ইচ্ছেমতো ঘুরতে থাকে অথবা উল্টোপাল্টা দিক নির্দেশ করে। সবচেয়ে রহস্যজনক ব্যাপার হলো বাল্ট্রা দ্বীপের ওপর বিমান থাকাকালীন সময়েও এমন অদ্ভুত আচরণ করেকম্পাস। আবার দ্বীপ পার হলেই সব ঠিক।বাল্ট্রার আরেকটি অদ্ভুত দিক হল, এর মানসিক দিক ।
বাল্ট্রায় পা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে কারও মাথা অনেক হালকা হয়ে যায়। অজানা-অচেনা কোন এক জায়গায় হারিয়ে যাওয়ার আশ্চর্য রকম অনুভূতি আচ্ছন্ন করে ফেলে মনকে। বেশিক্ষণ এ দ্বীপে থাকলে দ্বীপ থেকে চলে আসার পর কিছুদিন সেই আশ্চর্য অনুভূতি থেকে যায়। পরে অবশ্য আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। অদ্ভুত দ্বীপ বাল্ট্রায় কোন গাছ নেই। নেই কোনো পশুপাখি। কোনো পশুপাখি এ দ্বীপে আসতেও চায় না। জোর করে এলেও কোনো পশুপাখিকে বসতি করানো যায়নি। দেখা গেছে, বাল্ট্রাকে এড়িয়ে পাশের দ্বীপ সান্তাক্রুজের ধার ঘেঁষে চলছে প্রাণীগুলো। শুধু তাই নয়, উড়ন্ত পাখিগুলোও উড়তে উড়তে বাল্ট্রার কাছে এসেই ফিরে যাচ্ছে। দেখে মনে হয় যেন কোনো দেয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে ওরা। এই দ্বীপের রহস্যের কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা এ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবশ্য এরিক ফন দানিকেন ও তার অনুসারীরা যথারীতি তাদের স্বভাবসুলভদৃষ্টিভঙ্গিতে সেই পৃথিবীর বাইরের ভিন্নগ্রহের তথাকথিত মানুষদের টেনে এনেছেন। কিন্তু বিজ্ঞানীরা আজো এ রহস্যের কোন কূলকিনারা করতে পারেননি । প্রযুক্তিগত দিক দিকে বিশ্ব আজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। বিজ্ঞানীরা একদিন হয়ত এসব রহস্যের সমাধান মানুষের কাছে তুলে ধরবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন